Mystery of Creation of the Universe-2

বিজ্ঞানের বিষয় হিসেবে বিশ্ব সৃষ্টিতত্ত্বের জন্ম শুরু হয় 1916 সালে আলবার্ট আইনস্টাইনের

সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্ব (Theory of general relativity)
প্রণয়নের পর থেকে। এই তত্ত্ব মহাকর্ষকে বিশ্বের সর্বকালের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে ভাবতে শেখায়। মহাকর্ষ তত্ত্ব বলে যে, এই বিশ্বের সকল জড় বস্তুই অন্য সকল জড় বস্তুকে আকর্ষণ করে। এই আকর্ষণ যদিও দূরত্বের সঙ্গে কমে যায়, তা সত্ত্বেও এই পরস্পর আকর্ষণের ফলে সমস্ত বস্তুরই ক্রমাগত পরস্পরের সান্নিধ্যে চলে আসার কথা ও অবশেষে একত্রে মিশে যাওয়ার কথা। অর্থাৎ মহাকর্ষের প্রভাবে আমাদের পরিচিত বিশ্ব চিরস্থায়ী থাকতে পারে না।
জ্যোতির্বিজ্ঞানী এডউইন হাবল (Edwin Hubble) ১৯২০ সালে তাঁর 2.5m টেলিস্কোপের
সাহায্যে প্রথম আবিষ্কারটি করেন। এডউইন হাবল এর প্রথম পর্যবেক্ষণের সময়ের তুলনায় বর্তমান জ্যোতির্বিজ্ঞানিগণ এখন তাদের টেলিস্কোপের দৃষ্টি অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত করেছেন। 1929 সালে এডউইন হাবল (Edwin Hubble)-এর মহাবিশ্বের প্রসারণ আবিষ্কারের ফলে এর উৎপত্তি সম্পর্কীয় আলােচনা সম্পূর্ণ পরিবর্তন হয়। আজ থেকে 1500-2000 কোটি বছর আগে মহাবিশ্বের আকৃতি ছিল ডিম্বাকার এবং এর ভর ছিল 10^51 kg এবং ঘনত্ব 10^21 kgm^3 । অভ্যন্তরীণ বিপুল তাপ ও চাপের কারণে প্রচণ্ড শব্দে ডিম্বাকার বস্তুর মহাবিস্ফোরণ ঘটে। এই বিস্ফোরণের ফলেই সৃষ্টি হয়েছিল আমাদের এই মহাবিশ্ব। এটাই বিগ ব্যাং তত্ত্ব (Big bang theory).

এখান থেকেই সময়, স্থান, শক্তি ও পদার্থের উৎপত্তি হয় বলে ধারণা করা হয়। বিগ ব্যাং-এর কারণে সৃষ্ট খণ্ডাংশগুলাে বিভিন্ন রূপ যেমন গ্রহ, উপগ্রহ, নক্ষত্র, উল্কা, ধূমকেতু ইত্যাদি নাম নিয়ে প্রতিনিয়ত নির্দিষ্ট হারে দূরে সরে যাচ্ছে। দূরে সরতে সরতে এক সময় এগুলাে এদের শেষ সীমায় পৌছে যাবে। এর অর্থ হলাে নীহারিকাগুলাে পরস্পর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। ইহাই সম্প্রসারণ তত্ত্ব। যার দূরত্ব বেশি তার পরস্পর থেকে সরে যাবার গতিবেগও বেশি। হাবলের সূত্র প্রদানের বছর দুয়েক আগে ১৯২৭ সালে বেলজিয়ান জ্যোতির্বিদ জর্জ লেমাইটার (George Lemaitre)

প্রসারণশীল বিশ্ব সংক্রান্ত তত্ত্ব প্রদান করেন যা' হাবলের সূত্রের সাথে মিলে যায়। পরে ১৯৩১ সালে তিনি আরাে প্রস্তাব করেন যে, প্রসারণশীল বিশ্বকে যদি সময়ের সাথে পিছিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় তাহলে একটা বিন্দুতে আমরা উপনীত হতে পারবাে, যেখানে মহাবিশ্বের সমস্ত ভর পুঞ্জীভূত ছিল যাকে আদিম পরমাণু (Primeval atom) বলা যেতে পারে এবং এখান থেকেই স্থান কালের উদ্ভব। বিগ ব্যাং (Big Bang) মডেলের শুরুও এখান থেকেই। তাই জর্জ লেমাইটারকে বিগ ব্যাং মডেলের জনক বলা হয়ে থাকে। পরে ১৯৪৬ সালে জর্জ গ্যামো (George Gamow)

ও তার সহযােগী রালফ আলফার (Ralph Alpher) এবং রবার্ট হেরম্যান | Robert Herman) বলেন যে, যদি বিশ্ব দিক-নিরপেক্ষ ও সমসত্ত্ব এবং সাথে সাথে সতত প্রসারণশীল হয়, তাহলে নিশ্চয়ই মহাবিশ্বের ঘনত্ব ক্রমশ কমে চলেছে। অর্থাৎ বিপরীতক্রমে বলা যায় যে, অতীতে যখন গ্যালাক্সিগুলাের মধ্যকার দূরত্ব কম ছিল তখন নিশ্চয়ই মহাবিশ্বের ঘনত্ব এখনকার তুলনায় বেশি ছিল। আর এভাবে পেছােতে থাকলে একটা সুনির্দিষ্ট সময় আগে সমগ্র মহাবিশ্বকে একটা বিন্দুসম অবস্থায় পাওয়া সম্ভব। তখন মহাবিশ্বের সমস্ত ভর ছিল একটি বিন্দুতে পুঞ্জীভূত এবং ঘনত্ব ছিল অকল্পনীয় রকম বেশি। গ্যামাে সম্ভাব্য এই সময়টা হিসাব করে দেখলেন যে তা প্রায় 10 x 10^9 বছর থেকে 20 x 10^9 বছর। এ সময়টাকে গ্যামাের মহাবিশ্বের বয়স বলা হয় যা হাবল সময়ের অনুরূপ। সেই সময় ঐ অনন্য বিন্দু বা Singularity হঠাৎ করে প্রসারিত হতে শুরু করে যাকে মহাবিশ্বের বিগ ব্যাং (Big Bang) বা মহাবিস্ফোরণ মডেল বলা হয়। এখানে অবশ্য উল্লেখ করা প্রয়ােজন যে, বিগ ব্যাং কিন্তু কোনাে বিস্ফোরণ বা explosion ছিল না বরং তা ছিল অনন্য বিন্দু বা singularity-এর মহাসম্প্রসারণ (expansion)। বিগ ব্যাং নামটা অবশ্য এ মডেলের ঘাের বিরােধী ফ্রেড হয়েল (Fred Hoyle) 
 ১৯৪৯ সালে বিবিসি রেডিওর এক সাক্ষাৎকারে বলা হয় ব্যঙ্গ করেই উল্লেখ করেছিলেন। মহাবিশ্বের ঘনত্ব এখন যেমনটি আছে অতীতেও তেমনটি ছিল এ ধারণা থেকেই ১৯৪৮ সালে ফ্রেড হয়েল (Fred Hoyle), হারম্যান বডি (Hermann Bondi) এবং থমাস গােন্ড (Thomas Gold) বিগ ব্যাং-এর বিপরীতে স্থিতিবস্থা (Steady state) মডেল উপস্থাপন করেন। স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে মহাবিশ্ব যদি সতত সম্প্রসারিত হতে থাকে তাহলে এর ঘনত্ব অপরিবর্তিত থাকে কীভাবে। ঘনত্ব অপরিবর্তিত থাকা সম্ভব যদি এই সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্বে সর্বদা নতুন ভরের সৃষ্টি হতে থাকে। বলা হয় যে, মহাবিশ্বে এমন হারে বস্তুু সৃষ্টি হচ্ছে যে প্রসারিত হলেও মহাবিশ্বের ঘনত্ব প্রায় একই থাকছে। ফলে মহাবিশ্বের দিক-নিরপেক্ষতা ও সমসত্ত্বতা ব্যাহত হচ্ছে না। মহাবিশ্বের ঘনত্ব অপরিবর্তিত রাখতে প্রতি বিলিয়ন বছরে প্রতি ঘনমিটারে মাত্র একটি করে হাইড্রোজেন পরমাণু সৃষ্টি হওয়া প্রয়ােজন। আবার গ্যামাের মডেল থেকে দেখানাে সম্ভব হলাে যে, সৃষ্টির আদিতে Singularity বা অনন্য বিন্দুতে মহাবিশ্ব কেবল অসীম ঘনই ছিল না, অপরিসীম উষ্ণও ছিল। মডেলটিকে তাই বলা হলাে Hot Big Bang Model বা উষ্ণ বিগ ব্যাং মডেল। প্রসারণের সাথে সাথে মহাবিশ্বের তাপমাত্রা হ্রাস পাওয়ার কথা। গ্যামাে ধারণা করলেন Singularity থেকেই যদি মহাবিশ্বের উদ্ভব হয়ে থাকে তাহলে মহাসম্প্রসারণের সময়কার বিকিরণের কিছু অবশিষ্ট বিকিরণের (remnant radiation) অস্তিত্ব পাওয়ার কথা। উভয় মডেলের পক্ষে বিপক্ষে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা যখন দ্বিধাবিভক্ত তখন ষাটের দশকের মাঝামাঝি ১৯৬৫ সালে আর্নো অ্যালান পেনজিয়াস (Arno Allan Penzias) ও রবার্ট উইলসন (Robert Wilson)
                               
সন্ধান পেলেন মহাজাগতিক মাইক্রোওয়েভ পটভূমি বিকিরণের (cosmic microwave background radiation)। পেনজিয়াস ও উইলসন ব্যাপক পর্যবেক্ষণের পর সিদ্ধান্তে আসেন যে, এই মাইক্রোওয়েভ বিকিরণ নির্দিষ্ট কোনাে শনাক্তকৃত (identified) উৎস থেকে নয় বরং সারা বছরব্যাপী দিবারাত্র সবসময় সকল দিক থেকে আসছে। পেনজিয়াস ও উইলসন হিসাব করে দেখান যে, মাইক্রোওয়েভ পটভূমি বিকিরণের তাপমাত্রা 3 K এবং প্রায় সবাই মেনে নিলেন যে, এই মাইক্রোওয়েভ বিকিরণ উষ্ণ বিগ ব্যাং মডেল অনুযায়ী অতি প্রত্যাশিত অবশিষ্ট বিকিরণ। তাদের এই আবিষ্কারের জন্য 1978 সালে তারা পদার্থবিদ্যায় নােবেল পুরস্কার পেলেন।
১৯৮৯ সালে মহাজাগতিক পটভূমি এক্সপ্লোরার (Cosmic Background Explorer, COBE) বা কোবে.....চলবে
 



বন্ধুরা আশা করছি আজকের এই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। আশা করছি আপনাদের কাজে লাগবে। তো বন্ধুরা আজ এখানেই শেষ করছি। পোস্টটি কেমন লেগেছে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। এ রকম আরও আর্টিকেল পড়তে আমাদের Sci-Tech Daily Blog টি ভিজিট করুন এবং Subscribe করে রাখুন।

Blog Link             : https://sciencetech26.blogspot.com/
Facebook Group : https://www.facebook.com/groups/230864208943355
Facebook Page    : https://www.facebook.com/scitechdaily26
Instagram            : https://www.instagram.com/scitechdaily26/
Twitter                 : https://twitter.com/SicTechdaily2
Pinterest              : https://www.pinterest.com/scitechdaily26/
YouTube              : https://www.youtube.com/channel/UC3hypIzJcpwRoBuToQzoeUg

Comments