ইলেক্ট্রনিক্সের এই বিশাল জগতকে যে কম্পোনেন্টগুলো সৌন্দর্যমন্ডিত ও সহজ করেছে তার মধ্যে অন্যতম হলো রেজিস্টর। অনেক ক্ষেত্রের সার্কিটে কাজ করতে গেলেই দেখা যায় রেজিষ্টর পুড়ে গেছে। এখন আপানার কাছে হয়তো সার্কিট ডায়াগ্রাম নেই কিংবা উক্ত রেজিষ্টারের মানও জানা নেই। তাহলে সেই পুড়ে যাওয়া রেজিষ্টরের মান আমরা কিভাবে বের করবো। আর যদি তা না করতে পারি তাহলে সঠিক মানের রেজিষ্টরের অভাবে উক্ত সার্কিটটি অচল হয়ে যাবে। আর আমরা নিশ্চই কেউই এত অল্পতেই হাল ছেড়ে দিতে চাই না। তাই আজ আমি আপনাদের কাছে পুড়ে যাওয়া রেজিষ্টরের মান নির্ণয় এর কিছু পদ্ধতি আলোচনা করবো যার মাধ্যমে আপনি সহজেই পুড়ে যাওয়া রেজিষ্টরের একটা মান কিংবা কাছাকাছি মান নির্ণয় করে সার্কিটটিকে পুনঃরায় সচল করে তুলতে পারবেন। এখানে আমি যে পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করেছি তাকে বলা হয় Three Hand Method. এখানে তিনটি উপায়ে আমরা পুড়ে যাওয়া রেজিষ্টরের মান নির্ণয় করতে সক্ষম হবো।
তাহলে চলুন একে একে শুরু করা যাক।
পদ্ধতি নং - ০১
এই পদ্ধতিতে প্রথমে রেজিষ্টর এর উপরের আবরণকে পরিষ্কার করে নিতে হবে। অর্থাৎ বাহিরের যে কোটিং বা অাস্তর আছে তা পরিষ্কার করতে হবে। তারপর রেজিষ্টরের পুড়ে যাওয়া বা কাটা অংশটি খুজে বের করে প্রথমে এক অংশের মাপ নিতে হবে মাল্টিমিটার দ্বারা। অর্থাৎ যেখান থেকে রেজিষ্টরটি পুড়েছে সেখানে রেজিষ্টরটি দুইটি অংশে বিভক্ত হয়ে গেছে। সুতরাং দুই অংশের আলাদা ভাবে মাপ নিতে হবে। এক অংশের মাপ নেওয়ার পর অপর অংশের মাপ নিতে হবে। এরপর দুইটি মাপের যোগফল নির্ণয় করতে হবে। তাহলে উক্ত রেজিষ্টরটির মোটামুটি কাছাকাছি একটা মান পাওয়া যাবে। এখন কথা হল যেহেতু রেজিষ্টরটি পুড়ে গেছে সুতরাং তার কিছু অংশ অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। যার ফলে দুটোর যোগফলে আমরা যে মানটি পেয়েছি তা পুরোপুরি সঠিক মান নয় তাই তার সাথে সামান্য কিছু মান যোগ করে দিয়ে আমরা সেই মানের রেজিষ্টরটি লগিয়ে সমস্যার সমাধান করতে পারি। উধাহরণস্বরূপ বলা যায় আপনি দুইটি অংশের মাপ নিয়ে একটিতে ৪৮০ Ω এবং অপরটিতে ৪৯০ Ω পেলেন তাহলে দুটোর যোগফল দাড়ালো ৪৮০+৪৯০=৯৭০ Ω এখন এর সাথে আমরা যদি ৩০ Ω যোগ করি তাহলে মান দাড়ায় ১০০০ Ω বা ১ ㏀। তাহলে আমরা যে মানটি নির্ণয় করবো তার সাথে রেজিষ্টরের কাছাকাছি একটা মান যোগ করে বা কাছাকাছি বাজারে পাওয়া যায় এমন রেজিষ্টর নির্ণয় করে ব্যবহার করবো। এতে সহজেই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। তবে যে মান নির্ণয় করা হবে তার থেকে কিছু বেশি মানের রেজিষ্টর লাগানো উত্তম। কেননা রেজিষ্টর পুড়ে যাওয়ার কারণে সেখানে কিছুটা লস হয়েছে। আর তাই উক্ত মানের থেকে কিছুটা বেশি মানের রেজিষ্টর লাগাতে হবে।
পদ্ধতি নং-০২
এই পদ্ধতিতেও আপনি পুড়ে যাওয়া রেজিষ্টরের মান নির্ণয় করতে পারবেন। এই পদ্ধতিতে রেজিষ্টরকে মাল্টিমিটার দ্বারা পুড়ে যাওয়া রেজিষ্টরের আড়াআড়িতে ভোল্টেজ পরিমাপ করতে হবে। এরপর পুড়ে যাওয়া অংশগুলোর মধ্যে দিয়ে প্রবাণিত বিদ্যুতের পরিমাণ তথা এ্যাম্পিয়ার পরিমাপ করতে হবে। এর পর P=VI সূত্রটি প্রয়োগ করতে হবে। এতে করে আপনি P এর মান অর্থাৎ উক্ত রেজিষ্টরের পাওয়ার বের করতে পারবেন যেহেতু আপনি আগেই পুড়ে যাওয়াা রেজিষ্টরের আড়াআড়িতে ভোল্টেজ এবং কারেন্ট এর মান মাল্টিমিটার দ্বারা পরিমাপ করে বের করে ফেলেছেন। আর উপরের সূত্র ব্যবহার করে আপনি রেজিষ্টরের পাওয়ার বের করতে পারবেন। মানে হল উক্ত রেজিষ্টরটি কত ওয়াটের সেটি আপনি এই পদ্ধতিতে বের করে নিতে পারবেন।
পদ্ধতি নং-০৩
আপনার যদি সার্কিটের আউটপুট ভোল্টেজ কত তা জানা থাকে তবে আপনি এই পদ্ধতিতে রেজিষ্টরের মান বের করে সার্কিটেকে সচল করতে পারেন। তবে আগেই বলে রাখি এই পদ্ধতিটি একটি ঝামেলাপূর্ণ এবং আন্দাজে ঢিল ছোড়ার মতই। অর্থাৎ আপনাকে উচ্চ মাত্রার রেজিষ্টর লাগাতে হবে সাময়িকভাবে উক্ত পুড়ে যাওয়া স্থানে। তারপর সার্কিটে সাপ্লাই দিয়ে দেখতে হবে যে সার্কিটের আউটপুট ভোল্টেজ যেটা নির্ধারিত ছিলো সেটা পাওয়া যাচ্ছে কিনা। যদি না পাওয়া যায় বা তার থেকে কম হয় তাহলে তার থেকে কম মানের রেজিষ্টর লাগিয়ে পরীক্ষা করতে হবে। এভাবে পরীক্ষা করতে করতে যখন আপনি সঠিক আউটপুট ভোল্টেজ পেয়ে যাবেন তখন উক্ত রেজিষ্টরটিই আপনার সঠিক মানের রেজিষ্টর বলে বিবেচিত হবে। তবে এটি একটি সময় সাপেক্ষ এবং ঝামেলাপূর্ণ কাজ। তবে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় হয়তো সার্কিটটি আপনি বাহিরে খুঁজে পাচ্ছেন না। বাধ্য হয়ে আপনাকে উক্ত সার্কিটিটি রিপিয়ার করেই ব্যবহার উপযোগী করতে হবে। তখন এই পদ্ধতিতেই আপনাকে কষ্ট করে রেজিষ্টরের মান নির্ণয় করে নিতে হবে। আর উপরের দুইটি পদ্ধতি সহজতর কিন্তু যদি রেজিষ্টর একেবারেই পুড়ে যায় এবং তার কোন কিছুই পরিমাপ করার মত পরিস্থিতি না থাকে তাহলে এই তিন নং পদ্ধতি ছাড়া আর কোন বিকল্প রাস্তা নেই ।
Comments
Post a Comment