বামন গ্রহ (Draft Planet)

মহাকাশে সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে বেশ কিছু গ্রহ। আর একেই আমরা বলি সৌরজগত। কিন্তু সৌরজগত শুধু সূর্য আর গ্রহদের নিয়েই গঠিত নয়। এখানে আছে আরও অনেক কিছু। যেমন: ধুমকেতু, ধুলিকণা, উপগ্রহ, গ্রহাণু ইত্যাদি। এগুলো সম্পর্কে আমরা সকলেই জানি। তবে বামন গ্রহ সম্পর্কে জানি কি?


সৌরজগতে এমন কিছু মহাজাগতিক বস্তু আছে যেগুলোকে গ্রহও বলা যায় না, উপগ্রহও বলা যায় না। গ্রহ নয় কারণ এগুলো কোনো সাধারণ গ্রহ থেকেই আকারে ছোট। আবার উপগ্রহও নয় কারণ এগুলো কোনো গ্রহকে কেন্দ্র করে ঘোরে না। এগুলোকেই বলা হয় বামন গ্রহ। এ পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা সৌরজগতে মোট পাঁচটি বামন গ্রহের সন্ধান পেয়েছেন। এর মধ্যে প্লুটোর সবচেয়ে পরিচিত। বাকি চারটি হলো: এরিস, সেরেস, মাকেমাকে ও হাউমেয়া।


প্লুটো (Pluto)


Pluto

১৯৩০ সালে ক্লাইড টমবাগ প্লুটোকে আবিষ্কার করেছিলেন। সেই সময় প্লুটোকে সৌরজগতের নবম গ্রহ বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। এর পর ২০০৬ সালে বিজ্ঞানীরা দাবি করেন, প্লুটোর আকার চাঁদের থেকেও ছোট। তাই প্লুটোকে বামন গ্রহ বলে ঘোষণা করা হয়।প্লুটোর সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে এর সময় লাগে (পৃথিবীর হিসাবে) ২৪৮ বছর। সূর্য থেকে প্লুটোর গড় দূরত্ব প্রায় ৬০০ কোটি কিলোমিটার। কক্ষপথে প্লুটোর গতি মাত্র ৪.৭ কিলোমিটার। এর ব্যাস ২,৩৭৬.৬ কিলোমিটার। প্লুটোতে প্রচুর পরিমাণে মিথেন গ্যাস রয়েছে। বস্তুপিন্ডটিকে রোমান মৃত্যু দেবতার নামে নামকরণ করা হয়। প্লুটোর মোট পাঁচটি উপগ্রহ আছে। শ্যারন, নিক্স, হাইড্রা, কার্বেরস ও স্টিক্স।


এরিস (Eris)


Eris


এরিস (গ্রহাণুপুঞ্জ উপাধি ১৩৬১৯৯ এরিস) হলো সৌরজগতের সবচেয়ে ভারী  এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম বামন গ্রহ । মাইকেল ই. ব্রাউনের নেতৃত্বে পালোমার অবজারভেটরি ভিত্তিক একটি দল ২০০৫ সালের জানুয়ারিতে এরিস বামন গ্রহ আবিষ্কার করে এবং আবিষ্কারটি পরের বছরেই যাচাই করা হয়। এরিস হল সরাসরি সূর্যকে প্রদক্ষিণ করা নবম-বৃহত্তম বৃহদায়তন বস্তু এবং সৌরজগতে ( চাঁদ সহ) সামগ্রিকভাবে ষোড়শতম-বৃহত্তর বস্তু। এছাড়াও এটি এমন গরিষ্ঠ বস্তু যা কোনও কোনও মহাকাশযান দর্শন করতে পারেনি। এরিসের পরিমাপ করে পাওয়া গেছে তার ব্যাস ২,৩২৬ ± ১২ কিলোমিটার (১,৪৪৫.৩ ± ৭.৫ মা) এর ভর পৃথিবীর ভরের ০.২৭ শতাংশ এবং বামন গ্রহ প্লুটোর চেয়ে ২৭ শতাংশ বেশি। তবে যদিও প্লুটো আয়তনের তুলনায় কিছুটা বড়।


সেরেস (Ceres)


Ceres


সেরেস সৌরজগতের সবচেয়ে ছোট এবং গ্রহাণু বলয়ের একমাত্র বামন গ্রহ। ইতালীয় জ্যোতির্বিদ জিওসেপ্পে পিয়াজ্জি ১৮০১ সালে এটি আবিষ্কার করেন। তিনি এর নাম রাখেন সেরেস ফেরদিনানদিয়া। সেরেস নামের উৎস হচ্ছেন রোমান দেবী সেরেস, যিনি অঙ্কুরোদগম, ফসল ফলানো ও স্নেহের দেবী। “ফেরদিনানদিয়া” এসেছে নেপলস ও সিসিলি’র রাজা ৪র্থ ফার্দিনান্দ-এর নামানুকরণে। মাত্র ৯৫০ কিলোমিটার ব্যাসের সেরেস গ্রহাণুপুঞ্জের সবচেয়ে বড় জ্যোতিষ্ক। গ্রহাণুপুঞ্জের সকল গ্রহাণুর মোট ভরের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ভর সেরেসের একারই। সাম্প্রতিক কিছু পর্যবেক্ষণ থেকে জানা যায়, সেরেসের পৃষ্ঠ সম্ভবত পানি, বরফ ও পানিতে দ্রবীভূত বিভিন্ন খনিজ পদার্থের মিশ্রণ দিয়ে তৈরি। এর কেন্দ্র পাথুরে এবং চারপাশ ঘিরে তরল পানির মহাসাগর রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

মাকেমাকে(Makemake)


Make Make


মাকেমাকে (গৌণ গ্রহ তালিকাভুক্ত নাম ১৩৬৪৭২ মাকেমাক) একটি বামন গ্রহ যা কাইপার বেষ্টনীর চিরায়ত সদস্য (classical Kuiper belt object) গুলোর মাঝে সম্ভাব্য বৃহত্তম বলে গণ্য করা হয়। ৩১শে মার্চ ২০০৫ সালে মাইকেল ই. ব্রাউনের নেতৃত্বে একটি দল মাকেমাকে আবিষ্কার করেন। প্রাথমিকভাবে এর নাম ছিল ২০০৫ এফওয়াই৯। ২০০৮ সালে আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান সংঘ এই বস্তুকে বামন গ্রহ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ইস্টার দ্বীপের বাসিন্দা রাপা নুইদের পৌরণিক দেবতা মাকেমাকের নাম অনুসারে এই গ্রহের নামকরণ করা হয়। মাকেমাকে কুইপার বেল্টের স্থায়ী সদস্যদের মধ্যে বৃহত্তম বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। এর ব্যাস প্লুটো গ্রহের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ। মাকেমাকের কোনো উপগ্রহ পাওয়া যায়নি। তাই নিখুঁত ভর জানা সম্ভব হয়নি। এর গড় তাপমাত্রা, প্রায় -২৪৩.২ °সেলসিয়াস। এর পৃষ্ঠ মিথেন, ইথেন ও সম্ভবত নাইট্রোজেনের বরফে আবৃত বলে ধারণা করা হয়।

হাউমেয়া (Haumea)


Haumea


হাউমেইয়া (পূর্বে ২০০৩ ইএল৬১ নামে পরিচিত ছিল) কাইপার বেষ্টনীর একটি বামন গ্রহ যার ভর প্লুটোর প্রায় এক তৃতীয়াংশ। বিশাল সাংঘর্ষিক পরিবারের সদস্য হিসেবে পরিচিত এই বস্তুটি আবিষ্কার করেছে স্পেনের José Luis Ortiz Moreno গ্রুপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাইক ই ব্রাউন গ্রুপ । মোরেনো গ্রুপ স্পেনের সিয়েরা নেভাদা অবজারভেটরিতে কাজ করার সময় আবিষ্কারটি করেছে আর ব্রাউন গ্রুপের আবিষ্কারটি সম্পন্ন হয়েছে ক্যালটেকে। এমপিসি মোরেনোর গ্রুপকে আবিষ্কারের কৃতিত্ব দিয়েছে। কারণ তারাই আগে ঘোষণা দিয়েছিল। ২০০৮ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিদ ইউনিয়ন আইএইউ সৌরজগতের পঞ্চম বামন গ্রহটির নামকরণ করে। হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের পৌরাণিক দদেবী হাউমেইয়ার নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়। গ্রহটির দুটি উপগ্রহের নামকরণ করা হয় দেবী হাউমেইয়ার দুই কন্যার নামানুসারে- হিইয়াকা ও নামাকার নামে।

তথ্যসূত্র:

Dwarf Planets: Science & Facts About the Solar System’s Smaller Worlds


বন্ধুরা আশা করছি আজকের এই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। আশা করছি আপনাদের কাজে লাগবে। তো বন্ধুরা আজ এখানেই শেষ করছি। পোস্টটি কেমন লেগেছে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। এ রকম আরও আর্টিকেল পড়তে আমাদের Sci-Tech Daily Blog টি ভিজিট করুন এবং Subscribe করে রাখুন।

Blog Link             : https://sciencetech26.blogspot.com/
Facebook Group : https://www.facebook.com/groups/230864208943355
Facebook Page    : https://www.facebook.com/scitechdaily26
Instagram            : https://www.instagram.com/scitechdaily26/
Twitter                 : https://twitter.com/SicTechdaily2
Pinterest              : https://www.pinterest.com/scitechdaily26/
YouTube              : https://www.youtube.com/channel/UC3hypIzJcpwRoBuToQzoeUg

Comments