ইলেক্ট্রনিক্সের এই বিশাল জগতকে যে কম্পোনেন্টগুলো সৌন্দর্যমন্ডিত ও সহজ করেছে তার মধ্যে অন্যতম হলো ডায়োড।ডায়োড একটি দুই প্রান্ত বিশিষ্ট ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রাংশ যা বর্তনীতে কেবল মাত্র একদিকে তড়িৎপ্রবাহ হতে সাহায্য করে । ডায়োড মূলত একটি নির্দিষ্ট দিকের তড়িৎ প্রবাহকে সহায়তা করে এবং তার বিপরীত দিকের তড়িৎ প্রবাহকে বাধা প্রদান করে। এই ধরনের একদিকে প্রবাহিত করার প্রবণতাকে রেকটিফিকেশন বলা হয়ে থাকে যা এসি কারেন্ট থেকে ডিসি কারেন্টে তৈরি এবং রেডিও সংকেতের মর্মোদ্ধারের প্রথম ধাপ।
Diode এর প্রকারভেদঃ
গঠন ও কার্যপ্রণালীর উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের Diode ইলেকট্রনিক্স সার্কিটে ব্যবহার হতে দেখা যায়।
- সাধারণ ডায়োড
- জেনার ডায়ােড
- স্কটকি ডায়ােড
- টানেল ডায়ােড
- ভ্যারাক্টর ডায়ােড
- সোলার সেল
- লেজার ডায়ােড
- ফটো ডায়ােড
- লাইট ইমিটিং ডায়ােড
- ভ্যারিষ্টার ডায়ােড
ইলকট্রনিক্সে ডায়ােড ব্যহারের কারণ:
বাণিজ্যিক ভাবে আমরা সব সময় এসি করেন্ট পেয়ে থাকি তাই আমাদের বিভিন্ন মানের ডিসি কারেন্ট তৈরীর জন্য ডায়ােডের ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও আমাদের নিত্য দিনের ব্যবহৃত ইলেক্ট্রনিক্স প্রতিটা ডিভাইস ডিসি কারেন্টে চালিত হয়। আমাদের ব্যবহৃত টিভি মােবাইল, কম্পিউটার ইত্যাদি বেশির ভাগ সব ডিসি কারেন্টে চলে। আমরা যদিও এসি কারেন্টে দিয়ে কম্পিউটার, টিভি অন করি, কিন্তু আসলে টিভির মধ্যে যে ডায়ােড বা রেক্টিফায়ার থাকে তা এসি কারেন্ট কে ডিসি কারেন্ট ভােল্টে রুপান্তরিত করে। এজন্য ইলেক্ট্রনিক্সে ডায়ােডের ব্যবহার হয়ে থাকে।
পি আই ভি ডায়ােড কি:
পিআইভি (PIV) অর্থ পিক ইনভার্স ভােল্টেজ (Peak Inverse Voltage)। কোন ডায়োড কে রিভার্স বায়সে রাখলে এর অ্যানােড নেগেটিভ এবং ক্যাথােড পজেটিভ হয়। আপনি যদি অ্যানােডের নেগেটিভ ভােল্টেজ আস্তে আস্তে বাড়ান তখন দেখবেন যে আস্তে আস্তে ডায়ােডটি গরম হতে শুরু করেছে দেখবেন বেশি গরম হলে ডায়ােডটি নষ্ট হয়ে যাবে। তাই সমস্ত ডায়ােডের ক্ষেত্রে অ্যানােড কতটুকু নেগেটিভ ভােল্টেজ দেওয়া যেতে পারে তার একটা সীমা প্রতিটি ডায়ােডে বেধে দেওয়া থাকে। এটাই পি আই ভি ভােল্টেজ যেমন- IN 4001. IN4002, IN 4007 ইত্যাদি।
- IN4001 এর ক্ষেত্রে PIV 50 ভােল্ট সর্বোচ্চ কারেন্ট 1 অ্যাম্পিয়ার।
- IN4002 এর ক্ষেত্রে PIV 100 ভােল্ট সর্বোচ্চ কারেন্ট 1 অ্যাম্পিয়ার।
- IN4007 এর ক্ষেত্রে PIV 1000 ভােল্ট সর্বোচ্চ কারেন্ট । অ্যাম্পিয়ার।
এই ভাবে ডায়ােডের নম্বর আলাদা হলে তার কাজও আলাদা হয়। এজন্য ডায়ােড সম্পর্কে জানতে হলে তাকে সরাসরি ভালাে করে দেখতে হবে। তবে ডায়ােডের বিকল্প ব্যবহার করা যায়।
ডায়ােডের বিকল্প ডায়ােড সমূহ:
আপনি যখন প্রজেক্ট করার জন্য কোন ডায়োড পাবেন না তখন তার বিকল্প ডায়ােড ব্যবহার করতে হবে যদি না করেন তাহলে আপনার প্রজেক্ট সম্পূর্ন হবে না। এজন্য ডায়ােড সহ বিশেষ করে বিভিন্ন পার্টস এর বিকল্প ব্যবহার জানতে হবে। ডায়ােডের বিকল্প কিছু ডায়ােড তালিকা:
মিটারের মাধ্যমে ডায়ােড পরিক্ষার নিয়ম:
অ্যাভােমিটারের মাধ্যমে খুব সহজে ডায়ােড বা রেক্টিফায়ার পরিক্ষা করা যায়। অ্যাভােমিটারের ওহম সেকশন সিলেক্ট করে,
প্রথমবার, ডায়ােডের নেগেটিভে মিটারের নেগেটিভের সাথে এবং ডায়ােডের পজেটিভ মিটারের পজেটিভের সাথে সংযুক্ত করলে একটা রিডিং দিবে। যদি রিডিং দেয় তাহলে দ্বিতীয়বার, ডায়ােডের নেগেটিভের সাথে মিটারের পজেটিভ এবং ডায়োডের পজেটিভের সাথে মিটারের নেগেটিভ সংযুক্ত করলে ডায়োড ভালাে থাকলে রিডিং দিবে না।
যদি দুই পারেই রিডিং দেয় বা কোন রিডিং না দেয় তাহলে বুঝবেন ডায়ােড খারাপ। অর্থাৎ সহজ হিসাব শুধু এক ভাবে রিডিং দিবে। পজেটিভে পজেটিভ দিলে রিডিং দিবে। আবার বলি.. যদি দুই পারেই ধরলে রিডিং দেয় বা দুই পারেই ধরলে কোন রিডিং না দেয় তাহলে বুঝবেন ডায়ােড খারাপ। শুধু একপারে ধরলে রিডিং দিবে বা মিটারের কাটা ফুল নড়বে/ডিজিটাল মিটারের নাম্বার বাড়বে। আশাকরি বুঝাতে পেরেছি না বুঝলে কমেন্ট করুন।
আশা করি ডায়ােডের ব্যবহার এবং ডায়োড সম্পর্কে আপনাদের প্রাথমিক ধারণা হয়েছে।
বর্তমানে ইলেক্ট্রনিক্সে অনেক ধরণের ডায়ােডের ব্যবহার হয় তার বর্ণনা করে শেষ করা সম্ভব নয় তবে যতটুকু আপনাদের জানার প্রয়োজন ততটুকু নিয়ে আপনাদের একটি বেসিক ধারণা দেয়ার চেষ্টা করবাে। আশা করি আমি যতটুকু ধারণা দিবাে এর বেশি আপনাদের জানার প্রয়ােজন হবেনা। তাে চলুন বর্তমানে ব্যবহৃত কিছু স্পেশাল ডায়োড সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
ইলকট্রনিক্সে বহুল ব্যবহৃত কিছু স্পেশাল ডায়োড সমূহ:
জেনার ডায়ােড কি:
জেনার ডায়ােড হলাে একধরণের ভােল্টেজ ষ্টেবিলাইজারের মত কাজ করে। সে একটা নির্দিষ্ট ভােল্টের ডিসি কারেন্ট আউটপুট দেয়। অর্থাৎ আপনি যদি জেনার ডায়ােডের ইনপুটে কম- বেশি কারেন্ট দেন তাহলে সে আউটপুটে নির্দিষ্ট একটা কারেন্ট দিবে। ভােল্টের কোন নড়চড় হবে না।ভিন্ন ভােল্টের জেনার ডায়োড হয়। আপনার যে ভোল্টের ডায়োড লাগবে সেটা আপনাকে সংগ্রহ করে নিতে হবে।
তাবে একটা কথা মনে রাখবেন যে জেনার ডায়ােড শুধুমাত্র রিভার্স বায়সে কাজ করানোর জন্য ব্যবহার করা হয়। আর এখানেই রেক্টিফায়ার ডায়ােডের সাথে জেনার ডায়ােডের প্রধান পার্থক্য। রেক্টিফায়ার ডায়ােড সব সময় ফরওয়ার্ড বায়সে কাজ করে। তাই বলে আপনি যদি ডায়ােডের ধরণ ক্ষমতার বাইরে কারেন্ট ইনপুট করেন তাহলে সেটা নষ্ট হয়ে যাবে এজন্য আগে ডায়ােডের ক্ষমতা সম্পর্কে জানতে হবে তার পর কারেন্ট দিতে হবে। ডায়ােড়ের গায়ে লিখা থাকবে ডায়ােডটি কত ভোল্টে আউটপুট দিবে এবং জেনে নিতে হবে যে সেটার সর্বোচ্চ ইনপুট কত ভােল্ট নিতে পারবে।
শটকি ডায়ােড:
বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল সার্কিটে তথা-কম্পিউটার প্রসেসরে পাওয়ার খরচ কমাতে কম ভােল্টেজ ড্রপের Diode প্রয়ােজন হয়। এই কারণে শটকি diode ব্যবহার করা হয়। এর ভােল্টেজ ড্রপ মূলত ০.১ বা ০.২ ভােল্ট এর কাছাকাছি।
টানেল ডায়ােড:
এই ধরনের Diode মূলত নেগেটিভ রেজিস্ট্যান্স শাে করে থাকে বলে একে অসিলেটর সার্কিট ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
পিন ডায়ােড:
সুপার ফাস্ট কাজের ক্ষেত্রে পিন Diode ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এটা মূলত গিগাহাটজ বেঞ্জে কাজ করে থাকে।
লাইট ইমেটিং ডায়ােড
এই ধরনের Diode ফরােয়ার্ড অবস্থায় কাজ করে থাকে। এটি মূলত ইলেকট্রনিক্স মিটারে, বিভিন্ন ডিজিটাল মিটারে, অডিও সিস্টেমে, অডিও এনালাইজারে, মনিটর ব্যকলাইটে, ইন্ডিকেটর হিসেবে ও বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স সিস্টেমে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
ডায়ােডের প্রকারভেদ অনুযায়ী এর প্রতীক দেখানাে হলাে:
ডায়ােডের বৈশিষ্ট্য:
- সেমিকন্ডাক্টর ডায়ােডে শুধু ফরােয়ার্ড বায়াসে কারেন্ট প্রবাহিত হয়।
- এর বেরিয়ার ভােল্টেজ ০.৩ ভােল্ট।
- ফরােয়ার্ড বায়াসে অল্প পরিমাণ রেজিস্ট্যান্স দেখায়।
- রিভার্স বায়াসে অনেক বেশি রেজিস্ট্যান্স দেখায়।
- ফরােয়ার্ডের কারেন্ট প্রযুক্ত ভােল্টেজের উপর নির্ভর করে থাকে।
Comments
Post a Comment