ট্রানজিস্টর কি ? ট্রানজিস্টর কাকে বলে ?

 ইলেক্ট্রনিক্সের এই বিশাল জগতকে যে কম্পোনেন্টগুলো সৌন্দর্যমন্ডিত ও সহজ করেছে তার মধ্যে অন্যতম হলো ট্রানজিস্টরট্রানজিস্টর (Transistor) একটি অর্ধপরিবাহী যন্ত্র, যা সাধারণত অ্যামপ্লিফায়ার এবং বৈদ্যুতিকভাবে নিয়ন্ত্রিত সুইচ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কম্পিউটার, সেলুলার ফোন এবং অন্য সকল আধুনিক ইলেকট্রনিক্সের মূল গাঠনিক উপাদান হিসেবে ট্রানজিস্টর ব্যবহার করা হয়। দ্রুত সাড়া প্রদানের ক্ষমতা এবং সম্পূর্ণ সঠিকভাবে কার্য সাধনের ক্ষমতার কারণে এটি আধুনিক ডিজাটাল বা অ্যানালগ যন্ত্রপাতি তৈরীতে বহুল ব্যবহৃত হচ্ছে।

Transistor


সাধারণ আলোচনা
ট্রানজিস্টর ইলেকট্রনিক বর্তনীর একটি সক্রিয় অংশ। এর অন্তত তিনটি সংযোগ থাকে। দুইরকমের ট্রানজিস্টর সবচেয়ে বেশি দেখা যায়: বাইপোলার এবং ফিল্ড ইফেক্ট। বাইপোলার শ্রেণীর ট্রানজিস্টরে ইলেকট্রন এবং হোল এই দুই ধরনের তড়িৎ-বাহকের অনুপ্রবেশকে কাজে লাগানো হয়। আর ফিল্ড-ইফেক্ট ট্রানজিস্টরে শুধুমাত্র ইলেকট্রন অথবা হোলকে তড়িৎবাহক হিসাবে ব্যবহার করা হয়। প্রথমে বাইপোলার শ্রেণীটিই তৈরি হয়েছিল। বর্তমানে দুই ধরনের ট্রানজিস্টরেরই প্রয়োগ দেখা যায়।
বাইপোলার জাংশন ট্রানজিস্টর (BJT)
গঠন
পোলারিটির উপর ভিত্তি করে বাইপোলার জাংশন ট্রানজিস্টর বা সংক্ষেপে ট্রানজিস্টরের গঠন দুই রকম: NPN এবং PNP । দুইটি N-টাইপ অর্ধ পরিবাহীর মাঝামাঝি একটি P-টাইপ অর্ধ পরিবাহী যুক্ত করে তৈরি হয় একটি NPN ট্রানজিস্টর। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে NPN transistor ই ব্যবহৃত হয় । এর তিনটি অংশ থাকে , যথা emmitor, base, collector.
বায়াস অনুযায়ী transistor এর কাজ হয় ।
ফিল্ড ইফেক্ট ট্রানজিস্টর (FET)
গঠন
ফিল্ড এফেক্ট ট্রানজিস্টর গঠিত হয় একটি P টাইপ অথবা একটি N টাইপ দণ্ড দিয়ে যার দুই পাশে থাকে দুটি PN জাং।সাধারণ ট্রানজিস্টর দুই ধরণের মেটারিয়াল দ্বারা তৈরী করা থাকে যেমন –হোল এবং ইলেক্ট্রন দ্বারা, কিন্তু ফিল্ড ইফেক্ট ট্রানজিস্টরে যে কোন একধরনের মেটারিয়াল ব্যবহার করে তৈরী করা হয়। হতে পারে ইলেক্ট্রন নতুবা হোল।ফিল্ড ইফেক্ট ট্রানজিস্টর দুই ধরণের হয় যথা­ ১। N চ্যানেল ফিল্ড ইফেক্ট ট্রানজিস্টর, ২। P চ্যানেল ফিল্ড ইফেক্ট ট্রানজিস্টর
Transistor symbol created on Portuguese pavement in the University of Aveiro

               
বিভিন্ন প্রকার ট্রানজিস্টর

বাইপোলার জাংশন ট্রানজিস্টর 
  • হেটারোজাংশন বাইপোলার ট্রানজিস্টর
  • শটকি ট্রানজিস্টর
  • অ্যাভালানশি ট্রানজিস্টর
  • ডার্লিংটন ট্রানজিস্টর
  • ইনসুলেটেড-গেট বাইপোলার ট্রানজিস্টর
  • ফটোট্রানজিস্টর
  • মাল্টিপল-এমিটার ট্রানজিস্টর 
  • মাল্টিপল-বেস ট্রানজিস্টর 
ফিল্ড-ইফেক্ট ট্রানজিস্টর 
  • কার্বন ন্যানোটিউব ফিল্ড-ইফেক্ট ট্রানজিস্টর
  • জাংশন ফিল্ড-ইফেক্ট ট্রানজিস্টর
  • মেটাল-সেমিকন্ডাক্টর ফিল্ড-ইফেক্ট ট্রানজিস্টর 
  • হাই-ইলেক্ট্রন-মোবিলিটি ফিল্ড-ইফেক্ট ট্রানজিস্টর
  • মেটাল-অক্সাইড-সেমিকন্ডাক্টর ফিল্ড-ইফেক্ট ট্রানজিস্টর 
  • ইনভার্টেড-টি ফিল্ড-ইফেক্ট ট্রানজিস্টর 
  • ফিন ফিল্ড-ইফেক্ট ট্রানজিস্টর 
  • ফাস্ট-রিভার্স এপিট্যাক্সিয়াল ডায়োড ফিল্ড-ইফেক্ট ট্রানজিস্টর 
  • থিন-ফিল্ম ট্রানজিস্টর 
  • অর্গানিক ফিল্ড-ইফেক্ট ট্রানজিস্টর 
  • ব্যালিস্টিক ট্রানজিস্টর
  • ফ্লোটিং-গেট ট্রানজিস্টর
  • আয়ন-সেনসিটিভ ফিল্ড-ইফেক্ট ট্রানজিস্টর
  • ইলেক্ট্রোলাইট-অক্সাইড-সেমিকন্ডাক্টর 
  • ডিওক্সিরাইবোনিউক্লিক এসিড ফিল্ড-ইফেক্ট ট্রানজিস্টর 
  • টানেল ফিল্ড-ইফেক্ট ট্রানজিস্টর
ডিফিউশন ট্রানজিস্টর
ইউনিজাংশন ট্রানজিস্টর 
সিঙ্গেল-ইলেক্ট্রন ট্রানজিস্টর
ন্যানোফ্লুইডিক ট্রানজিস্টর
Multigate devices:
  • টেট্রোড ট্রানজিস্টর
  • পেন্টোড ট্রানজিস্টর
  • ট্রাইগেট ট্রানজিস্টর 
  • ডুয়াল-গেট ফিল্ড-ইফেক্ট ট্রানজিস্টর
জাংশনলেস ন্যানোওয়্যার ট্রানজিস্টর
ভ্যাকুয়াম-চ্যানেল ট্রানজিস্টর 
অর্গানিক ইলেক্ট্রোকেমিক্যাল ট্রানজিস্টর

সকল ট্রানজিস্টর গঠন দুই রকম যথা:-

  1. NPN ট্রানজিস্টর।
  2. PNP ট্রানজিস্টর।
PNP ট্রানজিস্টর: সব ট্রানজিস্টরের সাধারণত তিনটা পা থাকে, যার নাম ইমিটার-বেস-কালেক্টর, সব সময় ট্রানজিস্টর এই তিনটা নীতিতে কারেন্ট প্রবাহ করে। তবে তার ঐ তিনটা পায়ের পজেটিভ-নেগেটি-পজেভি অর্থাৎ PNP থাকে, যাকে PNP ট্রানজিস্টর বলা হয়। অনেকটা ডায়োডের মত, প্রথমত দুইটা ডায়োড ব্যবহার করে ট্রাজিস্টর আবিস্কার করা হয়েছিল। তাই বলে মনে করবেন না যে ডায়োড দিয়ে ট্রানজিস্ট তৈরী করা হয়, বর্তমানের ট্রানজিস্টর কিন্তু অনেক ভিন্ন।
NPN ট্রানজিস্টর: NPN ট্রানজিস্টরেরও সাধারণত তিনটা পা থাকে, যার নাম ইমিটার-বেস-কালেক্টর, সব সময় ট্রানজিস্টর এই তিনটা নীতিতে কারেন্ট প্রবাহ করে। তবে তার ঐ তিনটা পায়ের কাজ আলাদা নেগেটিভ-পজেটিভ-নেগেটিভ- অর্থাৎ NPN থাকে, যাকে NPN ট্রানজিস্টর বলা হয়

ট্রানজিস্টর দুইভাবে কাজ করে যথা-

  1. গতিরোধক হিসাবে
  2. গতিবর্ধক হিসাবে

১। গতিরোধক হিসাবে :  ট্রানজিস্টর এমন একসুইচ মিনিটে হাজার হাজার বার অন-অফ করা যায় এটা কোন সাধারণ সুইচ নয়। সার্কিটের কোথায় কখন কত তাড়া-তাড়ি কিভাবে কারেন্ট অন-অফ করতে হবে তা ট্রানজিস্টর দ্বারা নির্ধারণ করা হয়। ট্রানজিস্টর ছাড়া এত ফাস্ট কাজ করে এমন কোন ডিভাইস ইলেক্ট্রিনিক্সে নেই। তাই ট্রানজিস্টর কে ইলেক্ট্রনিক্সের সুইচ হিসাবে ব্যবহার করা হয়।

২। গতিবর্ধক হিসাবে: ইলেক্ট্রনিক্সের সার্কিট ভালো ভাবে লক্ষ করলে দেখবেন যে সার্কিটের বিদ্যুৎ প্রবাহকে অনেক পথ পাড়ি দিতে হয়। অর্থাৎ অনেক বড় কানেকশন লাইন অতিক্রম করে তার গন্তব্যে পৌছাতে কারেন্টের গতি কমে আসে তখন সেখানে কারেন্টের গতিবর্ধক হিসাবে ট্রানজিস্টরের ব্যবহার করা হয়। এটা দুই ডায়োডের মত কাজ করে তবে ডায়োড নয়।

ট্রানজিস্টর পরিক্ষা করার নিয়ম:

ট্রানজিস্টরের নেগেটিভের সাথে মিটারের নেগেটিভ সংযোগ দিয়ে অন্য দুইটা পিনে মিটারের পজেটিভ সংযোগ দিয়ে দেখতে হবে যে, মিটারের ওহম বাড়ছে কি-না, যদি বাড়ে তাহলে বুঝবেন ট্রনজিস্টর ঠিক আছে। তার পর আবার উলট-পালট করে দেখবেন মিটারের কাটা নড়ে কি-না, যদি দেখেন উলট-পালট করলেও মিটারের ওহম বাড়ছে তাহলে বুঝবেন ট্রানজিস্ট্রর খারাপ। মোট কথা শুধু একদিকে সংযোগ দিলে ট্রানজিস্টরের ইমিটার ও কালেক্টরের ওহম গতি বাড়বে। ভালো ট্রানজিস্টরের কোন মতেই বিপরিতে বাড়বে না।

NPN না PNP ট্রানজিস্টর কিভাবে বুঝবেন:

অ্যাভোমিটারের মাধ্যমে খুব সহজেই ট্রানজিস্টরের NPN ও PNP বের করা যায়, আপনি পরীক্ষা করার নিয়ম শেখার জন্য প্রথমে একটি ভালো ট্রানজিস্টর নিবেন এবং একটি অ্যাভোমিটার নিবেন, তারপর ট্রানজিস্টরের যেকোন প্রান্তে মিটারের সংযোগ দিয়ে দেখবেন কোন পিনে সংযোগ দিলে অন্য দুইটা পিনে মিটারের সংযোগ পাই। যদি দেখেন অন্য পিনে সংযোগ দিলে মিটরের ওহম বাড়ছে তাহলে যেভাবে আপনি সংযোগ দিয়েছেন সেইভাবে দেখুন নেগেটিভ-পজেটিভ-পজেটিভ হবে।

মিটারের একটা পিন ট্রানজিস্টরের একটা পিনে লাগানোর পরে অন্য দুইটা পিনে সংযোগ দিলে কাজ করলে বুঝবেন, আপনার একটা পিনে যে সংযোগ দেওয়া আছে মনে করুন সেটা পজেটিভ তাহলে বাকি দুইটা নেগেটিভ হবে সহজ হিসাব। আপনি যদি বুঝতে না পারেন তাহলে আমাকে কমেন্ট করুন।

বিকল্প ট্রানজিস্টরের ব্যবহার:

অনেক সময় কোন প্রজেক্ট করতে গিয়ে দেখা যায় যে ডায়াগ্রামের ট্রানজিস্টর পাওয়া যাচ্ছেনা সেজন্য অনেক সময় সে প্রজেক্ট করা বন্ধ করে দিতে হয়। সে ক্ষেত্রে ট্রানজিস্টরের বিকল্প ব্যবহার করা যায়। গুগলে খোঁজ করলে অনেক পাবেন। এর মধ্যে আমি কিছু আপনাদের জন্য খুঁজে দিলাম:



বন্ধুরা আশা করছি আজকের এই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। আশা করছি আপনাদের কাজে লাগবে। তো বন্ধুরা আজ এখানেই শেষ করছি। পোস্টটি কেমন লেগেছে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। এ রকম আরও আর্টিকেল পড়তে আমাদের Sci-Tech Daily Blog টি ভিজিট করুন এবং Subscribe করে রাখুন।

Blog Link             : https://sciencetech26.blogspot.com/
Facebook Group : https://www.facebook.com/groups/230864208943355
Facebook Page    : https://www.facebook.com/scitechdaily26
Instagram            : https://www.instagram.com/scitechdaily26/
Twitter                 : https://twitter.com/SicTechdaily2
Pinterest              : https://www.pinterest.com/scitechdaily26/
YouTube              : https://www.youtube.com/channel/UC3hypIzJcpwRoBuToQzoeUg

Comments