ক্যাবল কাকে বলে ? কত প্রকার ও কি কি ?

ইলেক্ট্রনিক্সের এই বিশাল জগতকে যে কম্পোনেন্টগুলো সৌন্দর্যমন্ডিত ও সহজ করেছে তার মধ্যে অন্যতম হলো ওয়্যার বা ক্যাবল। ওয়্যার বা ক্যাবল বলতে আমরা বুঝি বৈদ্যুতিক পরিবাহী তার যা তৈরী হয় কপার, অ্যালুমিনিয়ম, ফাইবার ম্যাটেরিয়াল দিয়ে।

ক্যাবল কত প্রকার ও কি কি : 

ক্যাবলকে ২ ভাগে ভাগ করা যায় । যথাঃ

1.                  ইলেকট্রিক ক্যাবল(Electric cable
2.                 নেটওয়ার্ক মিডিয়া ক্যাবল(Network media cable)

ইলেকট্রিক ক্যাবল(Electric cable):

ইলেকট্রিক ওয়্যার বা ক্যাবল বলতে আমরা বুঝি বৈদ্যুতিক পরিবাহী তার যা তৈরী হয় কপার, অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে তৈরি। যার ভেতর দিয়ে কারেন্ট বা বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়ে থাকে, পাওয়ার শক্তি চলাচল করে। এককথায় ক্যাবল এর প্রধান কাজ বলতে গেলে তড়িৎ শক্তি প্রবাহ করা। সেটা হতে পারে কপার বা অ্যালুমিনিয়াম ক্যাবল।তাই ক্যাবল ব্যবহার করা হয় ইলেকট্রিক বিদ্যুৎ শক্তি ট্রান্সফার করার কাজে।

ইলেকট্রিক ক্যাবল প্রথমত ২ প্রকার হয়ে থাকে, যেমন- 

1.             কপার ওয়্যার ক্যাবল(Copper wire cable)

2.             অ্যালুমিনিয়াম ওয়্যার ক্যাবল(Aluminum wire cable)

কপার ওয়্যার ক্যাবল(Copper wire cable):সাধারণত কপার বলতে আমরা তামার তারকে বুঝে থাকি। ইলেকট্রিক ক্যাবলে কপার ধাতব ব্যবহার হয়ে থাকে যা আমরা ইলেকট্রিক হাউস ওয়্যারিং এর কাজে নিজের বাড়ীতে ও ইন্ড্রাস্ট্রিতে ব্যবহার করে থাকি।

অ্যালুমিনিয়াম ওয়্যার ক্যাবল(Aluminum wire cable):অ্যালুমিনিয়াম ধাতব ব্যবহার করে যে ক্যাবল তৈরী করা হয়ে থাকে তাকে অ্যালুমিনিয়াম ক্যাবল বলা যায়|

এছাড়া আরও নানা ধরনের ক্যাবল রয়েছে যা সাধারনত ব্যবহৃত হয় না। প্রায় সব ধরনের কাজে কপার বা অ্যালুমিনিয়াম ওয়্যার ক্যাবল  ব্যবহৃত হয়।

নেটওয়ার্ক মিডিয়া(Network media):

নেটওয়ার্কে এক কম্পিউটার থেকে আর এককম্পিউটারে ডাটা পাঠানোর জন্য কোন না কোন মাধ্যম এর প্রয়োজন হয় । যে মাধ্যমে নেটওয়ার্কের ডিভাইস সমুহপরস্পর এর সাথে যুক্ত থাকে তাকে বলা হয় নেটওয়ার্ক মিডিয়া বা মাধ্যম । এই মিডিয়ার মাধ্যমে নেটওয়ার্কে ডাটাপ্রবাহিত হয় এবং নেটওয়ার্কের পারফরমেন্স অনেকটা এর উপর নির্ভর করে ।


নেটওয়ার্ক মিডিয়াকে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা যায় । যথা…

ওয়্যার মিডিয়া (Wire Media)

ওয়্যারলেস মিডিয়া (Wireless Media)

ওয়্যার মিডিয়াকে আবার কয়োক ভাগে ভাগ করা যায় । এগুলি হল...

ট্যুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল (Twisted Pair Cable)

কোএক্সিয়াল ক্যাবল  (Coaxial cable)

ফাইবার অপটিক ক্যাবল(Fiberoptic  cable)

ওয়্যারলেস মিডিয়াকে ও কয়েক ভাগে ভাগ করা যায়, যথা……

রেডিও ওয়েভ (Radio Wave)

মাইক্রোওয়েভ (Microwave)

ইনফ্রারেড (Infaread)

নিন্মে এই নেটওয়ার্ক মিডিয়াগুলির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা করা হল ।


ট্যুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল : (Twisted Pair Cable):

ট্যুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল এ একসাথে কয়েক জোড়া ক্যাবল পাকানো অবস্থায় থাকে, যার মধ্যদিয়ে ডাটা সিগন্যাল প্রবাহিত হয় । এই ধরনের ক্যাবল সাধারণত টেলিকমিনিকেশন এর জন্য ব্যবহার করা হয় । ট্যুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল এ কালার কোডিং ব্যবহার করা হয় । প্রতিটি তার ইনসুলেশন দ্বারা আচ্ছাদন কার থাকে । এসব আচ্ছাদন কার তারকে ট্যুইস্ট করা বা পাকানো হয়, এবং পাকানো সবগুলি তারকে একসাথে নিয়ে একটি প্লাস্টিক এর জাকেট দ্বারা মোরানো থাকে । যাতে তার গুলি সুরক্ষিত থাকে । এ ক্যাবলে ডেটা ট্রান্সমিশন লস অত্যন্ত বেশি। এর ব্যান্ডউইথ 10Mbps-1Gbps এই ধরনের ক্যাবল এর জন্য সাধারণত RJ45 Connector ব্যবহার করা হয় ।

                                         

এই ক্যাবলকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয় । যথা...

1. শিল্ডেড ট্যুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল (Shielded Twisted Pair)

2. আনশিল্ডেড ট্যুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল (Unshielded Twisted Pair Cable)


শিল্ডেড ট্যুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল (STP): শিল্ডেড ট্যুইস্টেড পেয়ার ক্যাবলে প্রতিটি  ট্যুইস্ট জোড়া থাকে অর্থাৎ প্রতিটি ট্যুইস্ট এ দুটি ক্যাবল একসাথে পাকানো থাকে এবং এই প্রতিটি ট্যুইস্ট আবার একটি শিল্ড বা শক্ত আবরণ দ্বার আচ্ছাদন কারা থাকে । এই প্রতিটি ট্যুইস্ট কে আবার একটি প্লস্টিক এর জাকেট এর মাধ্যমে আচ্ছাদন কারা থাকে। এই ধরনের ক্যাবলে Electromagnetic interference বা EMI ইফেক্ট এর শিকার হয় না বললেই চলে । এই ধরণের ক্যাবল এর মাধ্যমে সাধারণত 100 মিটার পর্যন্ত কোন রিপিটার ব্যবহার করা ছাড়াই ডাটা ট্রান্সমিট করা যায় । এর ডাটা ট্রান্সফার স্পিড সাধারণত 16 -500Mbps পর্যন্ত হতে পারে । সাধারণত লোকল এরিয়া নেটওয়ার্কে এই ধরনের ক্যাবল ব্যবাহার করা হয় ।

আনশিল্ডেড ট্যুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল (UTP): আনশিল্ডেড ট্যুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল  এ প্রতিটি  ট্যুইস্ট জোড়া থাকে কিন্ত প্রতিটি ট্যুইস্ট এ কোন প্রকার শিল্ডিং করা থাকে না । শুধু মাত্র সবকটি ট্যুইস্টকে নিয়ে একসাথে প্লাস্টিক এর কভার দ্বারা অচ্ছাদন করা থাকে । এই ক্যাবল সাধারণত লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কে ব্যবহার করা হয়। এধরনের ক্যাবল এর দাম সাধারণত খুব কম হয়ে থাকে । এবং এর ইন্সটলেশন খরচ খুব কম । এর ডাটা ট্রান্সফার স্পিড সাধারণত 10Mbps -1Gbps পর্যন্ত হতে পারে । তাই লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কে এই ধরনের ক্যাবল প্রচুর পরিমানে ব্যবহার করা হয় ।

আনশিল্ডেড ট্যুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল কে আবার কয়েকটি  ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে এবং এই প্রত্যেকটি  ক্যাটগরির কিছু আলাদা আলাদা  বৈশিষ্ট রয়েছে । ক্যাটাগরি গুলি হল যথা…

Category 1 (Cat1)

Category 2 (Cat2)

Category 3 (Cat3)

Category 4 (Cat4)

Category 5 (Cat5)

Category 5e (Cat5e)

Category 6 (Cat6)

Category 6a (Cat6a)

Category 7 (Cat7)

কোএক্সিয়াল ক্যাবল  (Coaxial cable):

 এই ধরনের ক্যাবল সাধারণত মাঝখানে একটি তামার তার , তার উপর দিয়ে একটি ফোম ইন্সুলেশন এবং তার উপর ইন্সুলেশনকে ঘিরে আর একটি পরিবাহি তামার তার দ্বারা মোড়োনো থাকে এবং সর্বশেষ এই সমস্থকিছুকে একটি প্লাস্টিক জাকেট দ্বারা মোড়ানো থাকে ।  ইথারনেট লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কে এই ধরনের ক্যাবল ব্যবহার কার হয় । এই ধরনের ক্যবলকে কানেকশন দেওয়ার জন্য BNC Connector ব্যবহার করা হয় ।

 এ ধরনের ক্যাবলের ডেটা ট্রান্সফার রেট তুলনামূলকভাবে বেশি হয়। তবে ডেটা ট্রান্সফার রেট তারের দৈর্ঘ্যের ওপর নির্ভর করে। সাধারণত কো-এক্সিয়াল ক্যাবল ব্যবহার করে এক কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্বে ডিজিটাল ডেটা প্রেরণ করা যায়, এক্ষেত্রে ডেটা ট্রান্সফার রেট 200 Mbps পর্যন্ত হতে পারে এবং ট্রান্সমিশন লস অপেক্ষাকৃত কম হয়।

নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত কো-এক্সিয়াল ক্যাবলকে প্রধানত দুভাগে ভাগ করা হয়। যথাঃ

1. থিননেট(Thinnet)

2. থিকনেট(Thicknet)

থিননেট(Thinnet):থিন কোএক্সিয়াল ক্যাবল ব্যবহার করে যে নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠে তাকে বলা হয় থিননেট। থিন কোএক্সিয়াল ক্যাবলে ব্যাস হয়ে থাকে প্রায় 0.25 ইঞ্চি এবং কোনাে প্রকার রিপিটার ছাড়া 185 মিটার দৈর্ঘ্যের ক্যাবল ব্যবহার করা যায়। এ ধরনের নেটওয়ার্ককে 10বেজ2 (10Base2) নেটওয়ার্কও বলা হয়ে থাকে। এখানে 10 হলাে এর ব্যান্ডউইডথ 10Mbps এবং 2 হলাে ক্যাবল দৈর্ঘ্য (200 মিটার)। বাস্তবে 200 মিটার ক্যাবল ব্যবহার করা না গেলে বোঝার সুবিধার জন্য ২ ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের নেটওয়ার্ক বেশ জনপ্রিয়। কারণ এটি সহজে ইনস্টল করা যায় এবং ক্যাবলের সাথে ডিভাইসের সংযোগের জন্য বিএনসি কানেক্টর ব্যবহার করা হয়।

থিকনেট(Thicknet):থিক কোএক্সিয়াল ক্যাবল ব্যবহার করে গড়ে ওঠা নেটওয়ার্ককে থিকনেট বা 10Base5 নেটওয়ার্ক বলা হয় থিক। কোএক্সিয়াল ক্যাবলের ব্যাস প্রায় 0.5 ইঞ্চি এবং রিপিটার ছাড়া ক্যাবল সেগমেন্ট 500 মিটার পর্যন্ত যেতে পারে। এ ধরনের ক্যাবলের সাথে ডিভাইসকে যুক্ত করার জন্য ভ্যাম্পায়ার ট্যাপ (vampire tap) ও ড্রপ ক্যাবল ব্যবহৃত হয়। ড্রপ ক্যাবল ডিভাইস থেকে ভ্যাম্পায়ার ট্যাপের সাথে যুক্ত থাকে। আর ভ্যাম্পায়ার ট্যাপ যুক্ত থাকে থিক কোএক্সিয়াল ক্যাবলের সাথে। এই ট্যাপ যুক্ত করা বেশ কঠিন কাজ। থিক কোএক্সিয়াল ক্যাবলের দাম বেশি কিন্তু থিন কোএক্সিয়ালের সমান ব্যান্ডউইথ দেয়। এর ব্যয়বাহুল্য এবং কঠিন ইনস্টলেশনের কারণে বর্তমানে থিকনেট প্রায় দেখাই যায় না


ফাইবার অপটিক ক্যাবল (Fiber optic cable):

 ফাইবার অপটিক (Fiber optic) একধরনেরপাতলা, স্বচ্ছ তন্তু বিশেষ। এটি সাধারণত সিলিকা, কাচঁ অথবা প্লাস্টিক দিয়ে বানানো, যা আলো পরিবহনে ব্যবহৃতহয়। এই তন্তুর মধ্যদিয়ে যে আলো প্রবাহিত হয়, এই আলোর মাধ্যমে ডাটা প্রবাহিত হয় । এর মধ্য আলোর পূর্ণআভ্যন্তরীন পতিফলন এর মাধ্যমে ডাটা একস্থান হতে অন্য স্থানে প্রবাহিত হয়ে থাকে । ফাইবার অপটিক ক্যাবলসাধারণত প্রায় সকল প্রকার সাইড ইফেক্ট থেকে মুক্ত । অর্থাৎ কোন কিছুই এর সিগন্যালকে প্রভাবিত করতে পাবেনা । যে তন্তুর মধ্যেদিয়ে ডাটা প্রবাহিত হয় তাকে বলা হয় কোর । একটি ক্যাবল এর ভিতর অনেক কোর থাকতেপারে । একটি মাল্টিমোড কোর এর ডায়ামিটার হলো 125 মাইক্রোন (125µ) যা মানুষের দুটি চুলের সমানমোটা । এর প্রধান সুবিধা হল এতে অনেক উচ্চগতি পাওয়া যায় । বর্তমানে এতে 100 mbps থেকে 2 Gbps পর্যন্ত স্পিড পাওয়া যায় ।ফাইবার অপটিক ক্যাবল দুভাগে বিভক্ত-

স্টেপ ইনডেক্স ফাইবার(Step index fiber)

গ্রেডড ইনডেক্স ফাইবার(Graded index fiber)

স্টেপ ইনডেক্স ফাইবার(Step index fiber): স্টেপ ইনডেক্স ফাইবারে কোরের প্রতিসরাংক সর্বএ সমান থাকে।

গ্রেডেড ইনডেক্স ফাইবা(Graded index fiber): গ্রেডড ইনডেক্স ফাইবারে কোরের প্রতিসরাংক কেন্দ্রে সবচেয়ে বেশি এবং এর ব্যাসার্ধ বারবর কমতে থাকে ।কোরের প্রতিসরাংকেরভিন্নতার কারনে এ দু ধরনের ফাইবার আলোকে রশ্মির গতিপথ ভিন্ন হয়।


রেডিও ওয়েভ (Radio Wave): রেডিওতে যেভাবে সিগন্যাল ট্রান্সমিট করা হয় ঠিক সেই ভাবে নেটওয়ার্কেও ডাটা ট্রান্সমিট করা হয় রেডিও ট্রান্সমিশন এর মাধ্যমে । এক্ষেত্রে প্রতিটি কম্পিউটারকে একই ফ্রিকোয়েন্সিতি থাকতে হবে ।

 

রেডিও ওয়েভের ফ্রিকোয়েন্সি 10 কিলোহার্টজ থেকে 1 গিগাহর্টিজ পর্য়ন্ত হয়ে থাকে । এর মধ্যকার ইলেকট্রোম্যাগনেটিক স্পেকট্রামকে বলা হয় রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি। এই সকল রিডিও ফ্রিকোয়েন্সি নিয়ন্ত্রিত । আমি ইচ্ছা করলেই যেকোন ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করতে পারব না। তার জন্য সরকারি অনুমোদন থাকতে হবে । কোন নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সিতে সিগনাল ট্রান্সমিট কারা জন্য সরকার থেকে লাইসেন্স নিতে হবে । কম্পিউটার নেটওয়ার্কি এর জন্য তিন ধররের রেডিও ট্রান্সমিশন ব্যবহার কার হয় ।

লো-পাওয়ার, সিঙ্গল  ফ্রিকোয়েন্সি

হাই-পাওয়ার, সিঙ্গল  ফ্রিকোয়েন্সি

স্প্রেড স্পেকট্রাম।


মাইক্রোওয়েভ (Microwave):

 ইলেকট্রোম্যাগনেটিক স্পেকট্রামের গিগাহার্টজ ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে মাইক্রোওয়েভ ট্রান্সমিশন । এসব ফ্রিকোয়েন্সি রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি এর চেয়ে অনেক বেশি হয় । এর ফলে এর গতি ও পারফরমেন্স অনেক বেশি হয় । মাইক্রোওয়েভ ট্রান্সমিশনে অনেক বেশি ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার কার হয় । এই ফ্রিকোয়েন্সি সাধারণত 4 থেকে 6 গিগাহার্টজ এবং 21 থেকে 23 গিগাহার্টজ পর্যন্ত হতে পারে । মাইক্রোওয়েভ সিস্টেম মূলত দুটো ট্রান্সসিভার নিয়ে গঠিত। এর একটি সিগন্যাল ট্রান্সমিট এবং অন্যটি রিসিভ করার কাজে ব্যবহৃত হয়। মাইক্রোওয়েভের এন্টিনা বড়  কোনো  ভবন বা টাওয়ারের উপর বসানো হয় যাতে সিগন্যাল বেশি দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে  এবং পথে কোনো বস্তু প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে না পারে। মাইক্রোওয়েভ ট্রান্সমিশন সাধারণত দুই ধরনের হতে পারে যথা ..

টেরেস্ট্রিয়াল মাইক্রোওয়েভ ট্রান্সমিশন(Terrestrial microwave transmission)

স্যাটেলাইট মাইক্রোওয়েভ ট্রান্সমিশন(Satellite microwave transmission

টেরেস্ট্রিয়াল মাইক্রোওয়েভ(Terrestrial microwave transmission): এই ধরণের প্রযুক্তিতে ভূপৃষ্টেই ট্রান্সমিটার ও রিসিভার বসানো হয়। ট্রান্সমিটার ও রিসিভার দৃষ্টি রেখায় যোগাযোগ করে। কোনো বাধা না থাকলে 1 থেকে 50 মাইল পযর্ন্ত ডেটা চলাচল করতে পারে।

স্যাটেলাইট মাইক্রোওয়েভ(Satellite microwave transmission): এক্ষেত্রে সিগনাল পাঠানোর জন্য ভূ-পৃষ্ঠে থাকে স্যাটেলাইট এন্টেনা এবং শূণ্যে থাকে স্যাটেলাইট। মহাশুণ্যে অবস্থিত স্যাটেলাইট ও ভু-পৃষ্ঠের ডিশ এন্টনার মধ্যে সিগনাল আদান প্রদান করার মাধ্যমে কমিউনিকেশন সিস্টেম গড়ে ওঠে।

ইনফ্রারেড (Infared):

 আমরা প্রায় সকলে রিমোট এর সাথে পরিচিত । এই রিমোটে সিগন্যল পরিবহন হয় ইনফ্রারেড পদ্ধতিতে । এইফ্রারেড মূলত আলোর মাধ্যমে সিগন্যাল ট্রান্সমিট হয় । কম্পউটার নেটওয়ার্কিং এর জন্য সাধারনত এই ধরনের টেকনোলজি ব্যবহার করা হয় না । সিমপ্লেক্স ট্রান্সমিশন এর ক্ষেত্রে এর গতি 16 mbps আর ডু্প্লেক্স ট্রান্সমিশন এর ক্ষেত্রে 1 mbps গতি হতে পারে । এই ধরনের সিগন্যাল সর্বোচ্চ 30 মিটার পর্যন্ত যেতে পারে । মাঝখানে কোন বাধা থাকলে তা ভেদ করে যেতে পারে না । এই ধরনের ট্রান্সমিশন দু ধরনের হতে পারে , যথা..

1. পয়েন্ট টু পয়েন্ট ইনফ্রারেড(Point-to-point infrared)

2. ব্রডকাস্ট ইনফ্রারেড(Broadcast Infrared)


হটস্পট( Hotspot):

 হটস্পট হচ্ছে এক ধরনের ওয়্যারলেস নেটয়ার্ক। হটস্পট তৈরির জন্য জনপ্রিয় তিনটি প্রযুক্তি-

1. ব্লু-টুথ ( Bluetooth )

2. ওয়াই-ফাই ( Wi-Fi )

3. ওয়াইম্যাক্স ( WiMAX )

ব্লু-টুথ ( Bluetooth )-

 ব্লুটুথ হচ্ছে একটি ওয়্যারলেস প্রযুক্তি যার মাধ্যমে একটি ওয়্যারলেস পার্সোনাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (WPAN)  সৃষ্টি করা যায়। এর দূরত্ব সাধারণত 10 থেকে 100 মিটার হয়ে থাকে। বিভিন্ন ডিভাইসে USB পোর্টের মাধ্যমে  ব্লুটুথ সংযোগ দেয়া হয়। 1994 সালে টেলিকম ভেন্ডর এরিকসন ব্লুটুথ উদ্ভাবন করে। দশম শতাব্দির ডেনমার্কের রাজা হারাল্ড ব্লুটুথ এর নামানুসারে এ প্রযুক্তিটির নাম রাখা হয়েছে  ব্লুটুথ। এর ডেটা ট্রান্সফার রেট প্রায় 1 মেগাবিট/সেকেন্ড বা তারচেয়ে বেশি।

ব্লুটুথের বৈশিষ্ট্য –

স্বল্প দূরত্বে দুটি ডিভাইসের মধ্যে ডেটা স্থানান্তরে ব্লুটুথ রেডিও ওয়েভ ব্যবহার করে।

ব্লুটুথ2.4গিগাহার্টজ (GHz) ফ্রিকুয়েন্সিতে কাজ করে।

10-100মিটারের মধ্যে অবস্থানকারী ডিভাইসের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে।

ব্লুটুথ একটি পিকোনেট এর আওতায় সর্বোচ্চ ৮টি যন্ত্রের সাথে সিগন্যাল আদান-প্রদান করতে পারে।

এটি IEEE 802.15.1 স্ট্যান্ডার্ডের ওয়্যারলেস পার্সোনাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (WPAN)


ব্লুটুথের  ব্যবহার-

ফোনের সাথে হ্যান্ডস ফ্রি হেডসেটের সংযোগ সাউন্ড বা ভয়েস ডেটা স্থানান্তরে ব্লুটুথ ব্যবহৃত হয়।

ফোন থেকে কম্পিউটারে ফাইল স্থানান্তরে এ প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়।

ব্লুটুথ ব্যবহার করে কম্পিউটারের সাথে অন্যান্য ডিভাইসের সংযোগ ঘটানো যায় এবং তথ্য আদান-প্রদান করা যায়।

পিসির ইনপুট ও আউটপুট ডিভাইসগুলোর সাথে তারবিহীন যোগাযোগে ব্লুটুথ ব্যবহৃত হয়।

জিপিএস রিসিভার, চিকিৎসা যন্ত্রপাতি, বারকোড স্ক্যানার ও ট্রাফিক কন্ট্রোল ডিভাইসগুলোতে ব্লুটুথ ব্যবহৃত হয়

ডেডিকেটেড টেলিহেলথ ডিভাইসগুলোতে হেলথ সেন্সর ডেটাগুলোর শর্ট রেঞ্জ ট্রান্সমিশনে ব্লুটুথ ব্যবহৃত হয়।

প্রায়ই ইনফ্রারেড ব্যবহৃত হয় এমন স্থানে নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ব্লুটুথ ব্যবহৃত হয়।

ওয়াই-ফাই(Wi-Fi)

- Wi-Fi শব্দটি Wireless Fidelity শব্দের সংক্ষিপ্ত রূপ। ওয়াই-ফাই হলো জনপ্রিয় একটি তারবিহীন নেটওয়ার্কিং প্রযুক্তি যা বেতার তরঙ্গকে ব্যবহার করে থাকে। এটি ওয়্যারলেস লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (WLAN)  এর IEEE(Institute of Electrical & Electronics Engineers) 802.11 প্রণীত স্ট্যান্ডার্ড। এর এরিয়া একটি কক্ষ, একটি ভবন কিংবা সাধারণত ইনডোরের ক্ষেত্রে এ দূরত্ব 32 মিটার এবং আউটডোরের ক্ষেত্রে 95 মিটারের মতো এলাকা জুড়ে হতে পারে।  ওয়াই-ফাই  এনাবল্ড কোনো ডিভাইস যেমন-  একটি পার্সোনাল কম্পিউটার, ভিডিও গেম কনসোল, স্মার্টফোন কিংবা ডিজিটাল অডিও প্লেয়ার প্রভৃতি একটি ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক অ্যাকসেস পয়েন্টের মাধ্যমে  ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত হতে পারে।

ওয়াই-ফাই এর বৈশিষ্ট্য-

এটি IEEE 802.11 স্ট্যান্ডার্ডের ওয়্যারলেস লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (WLAN)

Wi-Fi প্রযুক্তি ব্যবহার করে একই সাথে একাধিক কম্পিউটারে ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া যায়।

ওয়াই-ফাই এর কভারেজ সীমিত পরিসর থেকে নিয়ে বিস্তৃত পরিসরে পাওয়া সম্ভব।

Wi-Fi প্রযুক্তির সাহায্যে ইন্টারনেট অ্যাকসেস করা যায়।

ওয়াই-ফাই এর সুবিধা-

Wi-Fi প্রযুক্তি ব্যবহার করে একই সাথে একাধিক কম্পিউটারে ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া যায়।

নেটওয়ার্কের জন্য কোনো লাইসেন্স বা কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের প্রয়োজন হয় না।

নেটওয়ার্ক সহজে নতুন ব্যবহারকারী যুক্ত করে নেটওয়ার্কের পরিধি বাড়ানো যায়।

ওয়াই-ফাই লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কের তুলনায় তুলনামূলকভাবে সস্তা এবং খুব সহজেই ব্যবহার করা যায়।

ওয়াই-ফাই এর অসুবিধা-

Wi-Fi নেটওয়ার্কের সীমানা নির্দিষ্ট এলাকা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে।

নেটওয়ার্কের দক্ষতা ও গতি তুলনামূলকভাবে কম।

বিদ্যুৎ খরচ অন্যান্য স্ট্যান্ডার্ডের তুলনায় বেশি।

অন্যান্য ডিভাইস কর্তৃক সিগন্যালে জ্যাম বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে।

ডেটা ও নেটওয়ার্কের নিরাপত্তা ঝুঁকি থেকে যায়।

দূরত্ব বেশি হলে নেটওয়ার্কের গতি ও সিগন্যালের গুণগত মান উল্লেখযোগ্যহারে কমে যেতে পারে।

অজ্ঞাত বা অনুমোদিত ব্যক্তি কর্তৃক অ্যাক্সেস পয়েন্ট ব্যবহারের ঝুঁকি থাকে।


ওয়াইম্যাক্স(WiMAX)

WiMAX  এর পূর্ণরূপ হচ্ছে Worldwide Interoperability for Microwave Access। ওয়াইম্যাক্স প্রযুক্তির মাধ্যমে উচ্চ  গতির ব্রডব্যান্ড সেবা, তারবিহীন ব্যবস্থায় বিস্তৃত এলাকাজুড়ে ইন্টারনেট অ্যাকসেস করার সুযোগ পাওয়া যায়।1998 সালে IEEE 802.16, ওয়্যারলেস মেট্রোপলিটন এরিয়া নেটওয়ার্ক (WMAN)  এর জন্য মানটি আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করা হয়। এ প্রটোকলের ডেটা ট্রান্সমিশন রেট 70 মেগাবিট/ সেকেন্ড। WiMAX এর প্রধান দুটি অংশ রয়েছে। একটি হচ্ছে WiMAX এর বেস স্টেশন যা ইনডোর ও আউটডোর টাওয়ার নিয়ে গঠিত। অন্যটি হচ্ছে এন্টিনাসহ WiMAX রিসিভার, যা কোনো কম্পিউটার বা ল্যাপটপে সংযুক্ত থাকে। একটি WiMAX বেস স্টেশন সাধারণত 10 কিমি হতে শুরু করে 60 কিমি পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট অ্যাক্সেস সুবিধা দিয়ে থাকে।


ওয়াইম্যাক্স এর সুবিধা-

কভারেজ এরিয়া সাধারণত 10 কিমি হতে শুরু করে 60 কিমি পর্যন্ত হয়ে থাকে।

একক একটি স্টেশনের মাধ্যমে হাজার হাজার ব্যবহারকারীকে ইন্টারনেট সেবা দেয়া যায়।

ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড লাইসেন্স বা লাইসেন্সবিহীন উভয়ই হতে পারে।

প্রত্যন্ত অঞ্চলেও সেবা পাওয়া যায়; এমনকি যেখানে ফোনের সংযোগ পৌঁছেনি সেখানেও।

কোয়ালিটি অব সার্ভিসের নিশ্চয়তা দেয়।

তথ্য ও টেলিযোগাযোগ সেবাগুলো প্রদান করা যায়।

এন্টিনাসহ WiMAX রিসিভার, যা কোনো কম্পিউটার বা ল্যাপটপে সংযুক্ত থাকে।


ওয়াইম্যাক্স এর অসুবিধা-

দূরত্ব বেশি হলে একাধিক বেজ স্টেশনের প্রয়োজন হয়।

নেটওয়ার্কের অন্যান্য ওয়্যারলেস ডিভাইস সিগন্যালে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে।

সংস্থাপন এবং রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বেশি।

অনেক ব্যবহারকারী একই টাওয়ার অ্যাক্সেস করায় সার্ভিসের সঠিক গুণগত মান বজায় রাখা অনেকক্ষেত্রে কঠিন।

অন্যান্য নেটওয়ার্ক যেমন- ফাইবার অপটিক, স্যাটেলাইট, ক্যাবল ইত্যাদির সাথে তুলনা করলে ওয়াইম্যাক্স এর ডেটা রেট অত্যন্ত ধীরগতির।

খারাপ আবহাওয়া যেমন বৃষ্টির কারণে এর সিগন্যালে বিঘ্ন ঘটতে পারে।

বেশি বিদ্যুৎশক্তি ব্যবহারকারী প্রযুক্তি যার ফলে সার্বিক নেটওয়ার্ক চালানোর জন্য পর্যাপ্ত বিদ্যুতের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হয়।

বন্ধুরা আশা করছি আজকের এই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। আশা করছি আপনাদের কাজে লাগবে। তো বন্ধুরা আজ এখানেই শেষ করছি। পোস্টটি কেমন লেগেছে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। এ রকম আরও আর্টিকেল পড়তে আমাদের Sci-Tech Daily Blog টি ভিজিট করুন এবং Subscribe করে রাখুন।

Blog Link             : https://sciencetech26.blogspot.com/
Facebook Group : https://www.facebook.com/groups/230864208943355
Facebook Page    : https://www.facebook.com/scitechdaily26
Instagram            : https://www.instagram.com/scitechdaily26/
Twitter                 : https://twitter.com/SicTechdaily2
Pinterest              : https://www.pinterest.com/scitechdaily26/
YouTube              : https://www.youtube.com/channel/UC3hypIzJcpwRoBuToQzoeUg

Comments